Aplastic Anaemia ও মাদাম কুরি
লিখা ও ধারনায় ডাঃ খাজা আমিরুল ইসলাম ও ডাঃ শাফিউল আজম।
মেরি কুরি ইতিহাসের প্রথম ব্যাক্তি যিনি দুই বার নোবেলজয়ী। প্রথম বার পদার্থে, দ্বিতীয় বার রসায়নে। নারীদের মধ্যে তিনিই প্রথম নোবেল জয়ী। এই ইতিহাস সৃস্টিকারী নোবেল জয়ী বিজ্ঞানী ১৯৩৪ সালে মারা যান অ্যাপ্লাস্টিক এনিমিয়া ( Aplastic anaemia) নামক রোগে। পোল্যান্ডের ওয়ারশ শহরে ১৮৬৭ সালের ৭ই নভেম্বর জন্মগ্রহণ করেন ৫ ভাই-বোনের মাঝে সবচেয়ে ছোট মেরি কুরি। পিতা মাতা দু’জনেই ছিলেন শিক্ষক। মাত্র ১০ বছর বয়সে যক্ষা রোগে মাকে হারান। এরপর মূলত তিনিই সংসারটিকে সামলে রাখেন ও পিতার দেখাশোনা করতেন। তিনি ছিলেন খুবই ভালো ছাত্র আর কৌতুহলী ছিলেন সব ব্যাপারেই। নতুন কিছু জানার আগ্রহ ছিল প্রচন্ডরকম। মাধ্যমিকে ভালো ফলাফল করলেও ভর্তি হতে পারেননি সে সময়ের শুধুমাত্র ছেলেদের জন্য নির্ধারিত ওয়ারশ বিশ্ববিদ্যালয়ে। কুরি এবং উনার বোন ব্রোনয়া দুজনেরই স্বপ্ন ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার কিন্তু দেশের বাইরে গিয়ে পড়ার মত অর্থ তাদের ছিলনা। তাই দুজনের মাঝে এক সমঝোতা হলো – প্রথমে বড় বোন ব্রোনয়া যাবে বিশ্ববিদ্যালয়ে আর কুরি খরচ চালানোর জন্য কাজ করে অর্থ উপার্জন করবে। ব্রোনয়ার পড়া শেষ হলে সে কাজ করবে আর কুরি পড়ালেখা করবে। এভাবেই ১৮৯৩ সালে প্যারিস সরবোন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ফিজিক্সে মাস্টার্স ও পরের বছর অংকে মাস্টার্স ডিগ্রী অর্জন করেন।১৮৯৫ সালের ২৬ জুলাই ফরাসী পদার্থ বিজ্ঞানী পিয়েরে কুরির সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। প্রথমে মেরি এবং পিয়েরে দুজন আলাদা দুটি পোজেক্টে কাজ করতেন। কিন্ত মেরি রেডিও-এক্টিভিটি আবিস্কার করার পর পিয়েরে নিজের গবেষণা বন্ধ করে মেরির কাজে যোগ দেন।১৯০৩ সালে রেডিও-এক্টিভিটি নিয়ে কাজ করায় মেরি কুরি, পিয়েরে কুরি এবং হেনরি বেককুয়েলের সাথে যৌথভাবে পদার্থে নোবেল পুরষ্কার লাভ করেন। তবে সে সময়কার সামাজিকতায় লিঙ্গ বৈষম্যের দৃস্টিভঙ্গির কারণে প্রথমে মেরি কুরির নাম বিবেচনা করা হয়নি। তবে স্বামী হেনরি ও নোবেল নির্বাচন কমিটির একজন সদস্যের আগ্রহেই উনার নাম শেষ পর্যন্ত অন্তর্ভুক্ত হয়। পুনরায় ১৯১১ সালে পোলোনিয়াম ও রেডিয়াম আবিস্কারের জন্য মেরি কুরি রসায়নে নোবেল লাভ করেন। এভাবেই মেরি কুরি হয়ে ওঠেন ইতিহাসের প্রথম নারী নোবেল জয়ী এবং তিনিই একমাত্র ব্যাক্তি যিনি পদার্থ ও রসায়ন দুই বিষয়েই নোবেল জয় করেছেন।দূর্ভাগ্যবশত মেরি কুরি বা পিয়েরে কুরি কারোরই রেডিও-একটিভ পদার্থের সংস্পর্শে গেলে কি ধরনের বিপদ হতে পারে সে সম্পর্কে বিন্দুমাত্র ধারণা ছিল না। তাই পিয়েরে সবসময় পকেটে রেডিয়ামের স্যাম্পল নিয়ে ঘুরে বেরাতেন। সবাইকে দেখাতেন কিভাবে রেডিয়াম থেকে আলো আর তাপ বের হয়। আর মেরি কুরি রাতে বিছানার পাশে একটুকরো রেডিয়াম রেখে দিতেন ঘর মৃদু আলোয় আলোকিত করার জন্য। এমনকি তাদের গবেষণাগারের নোটপত্র, নোটবুক, ব্যাক্তিগত ব্যবহারের জিনিসগুলো আজ পর্যন্ত এতটাই রেডিও-একটিভ যে সেগুলো পড়া বা দেখার জন্য নিরাপদ নয়।আবিস্কারের মাধ্যমে এমনই তীব্র রেডিয়েশনের সংস্পর্শে এসেছিলেন এই দম্পতি। ফলে একসময় মেরি কুরি অ্যাপ্লাস্টিক এনিমিয়া নামক একধরনের রক্তরোগে আক্রান্ত হন। অতিরিক্ত রেডিয়েশনের সংস্পর্শে থাকার কারণেই উনি অ্যাপ্লাস্টিক এনিমিয়ায় আক্রান্ত হন। অ্যাপ্লাস্টিক এনিমিয়া হলে শরীর ঠিক ভাবে কোন রক্তকোষই তৈরী করতে পারে না। এই রোগে ভুগেই ১৯৩৪ সালের ৪ ঠা জুলাই ইতিহাস সৃস্টিকারী নোবেলজয়ী এই নারী মৃত্যুবরণ করেন।এতকথা হঠাৎ মনে পড়ে যাওয়ার পিছনে একটা কারণ আছে। গত ৫ দিন আগে আমাদের বগুড়া হেমাটোলজি সেন্টারের পক্ষ থেকে আমরা প্রথম বোন ম্যারো পরীক্ষা করি। পরীক্ষায় যে রোগটি ধরা পড়েছে সেটি হলো অ্যাপ্লাস্টিক এনিমিয়া।
Comments
Aplastic Anaemia ও মাদাম কুরি — No Comments
HTML tags allowed in your comment: <a href="" title=""> <abbr title=""> <acronym title=""> <b> <blockquote cite=""> <cite> <code> <del datetime=""> <em> <i> <q cite=""> <s> <strike> <strong>