৮ই মে আন্তর্জাতিক থ্যালাসেমিয়া দিবস
থ্যালাসেমিয়া রক্তের এমন একটি রোগ যা বঙ্শগতির বাহক ক্রোমোজোমের মাধ্যমে বঙ্শানুক্রমে পরিবাহিত হয়। আমাদের দেশের প্রায় শতকরা দশ ভাগ মানুষ এ রোগের বাহক।
থ্যালাসেমিয়া রোগটি ক্লিনিক্যালি ১) রক্ত পরিসান্চলন নির্ভর শীল ও ২) রক্ত পরিসান্চলন অনির্ভর শীল এই দুই ভাগে ভাগ করা হয়ে থাকে। রক্ত পরিসান্চলন নির্ভর থ্যালাসেমিয়াকে বলা যায় ” জন্ম থেকে জ্বলছি মাগো”। সারাজীবন ধরে প্রতি মাসে রক্ত পরিসান্চলনের এই জ্বালা ভুক্তভোগী ছাড়া আর কারো পক্ষে অনুধাবন করা সম্ভব নয়। মেডিকেল চিকিৎসা ব্যবস্থায় বলা হয় ” রোগ প্রতিরোধ প্রতিকারের চেয়ে উত্তম।” আর থ্যালাসেমিয়ার মত রোগের ক্ষেত্রে একথাটি যথার্থ।
প্রতিরোধ:
সাধারণত দুই জন থ্যালাসেমিয়া বাহক এর মিলনের ফলে যে সন্তান জন্ম নেয় তাদের প্রতি চার জনে একজন এ রোগে আক্রান্ত হয়। তিন উপায়ে এ রোগ প্রতিরোধ সম্ভব।
১) গণসচেতনতা বৃদ্ধি করে সামান্য কিছু স্ক্রিনিঙ রক্ত পরীক্ষা করে বাহকদের মধ্যে বিবাহ বন্ধ করা।
২) দুই জন থ্যালাসেমিয়া বাহক বিবাহের পর গর্ভাবস্থায় কিছু প্রিন্যাটাল স্ক্রিনিঙ পরীক্ষার মাধ্যমে গর্ভের সন্তান থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত হলে ঐ গর্ভ পরিত্যাগ করা।
৩) ইন ভিট্রো ফার্টিলাইজেশন: এর মাধ্যমে শুধু মাত্র থ্যালাসেমিয়া মুক্ত ভ্রূণ মাত্রিগর্ভে প্রতিস্থাপন করে।
চিকিৎসা:
তবে কি রক্ত পরিসান্চলন এ রোগের একমাত্র চিকিৎসা?
মোটেই নয়। থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত রোগীর রক্ত কনিকা ভেঙ্গে যাওয়ার ও অস্হিমজ্জায় সঠিক ভাবে রক্ত তৈরি হতে না পারার কারণে এদের রক্ত শূন্যতা হয়। আর এ রক্ত শূন্যতার পেছনে রক্তের হিমোগ্লোবিনের আলফা ও নন আলফা চেইনের ভারসাম্য হীনতা প্রধান কারণ হিসেবে স্বীকৃত। সুখবর হলো ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের হেমাটোলজি ও বোনম্যারো ট্রান্সপ্লান্ট বিভাগে আমরা থ্যলাসেমিয়া রোগীর এই মৌলিক সমস্যা চেইন ভারসাম্যহীনতাকে দূর করে রক্ত পরিসান্চলন নির্ভর এ রোগীর একটি বড় অংশকে নতুন উন্নত চিকিৎসা দিচ্ছি ও এদের এখন রক্ত পরিসান্চলন এখন প্রায় লাগছেনা।
থ্যলাসেমিয়া রোগীর ক্ষেত্রে রক্ত পরিসান্চলন হলো “Double bladed sword ” এর মতো। অপ্রয়োজনীয় রক্ত পরিসান্চলন ,….আ্যলোইমিউনাইজেশান, শরীরে আয়রন জমা, হার্ট ফেইলিউর, লিভার ফেইলিউর , বৃদ্ধি ব্যহত হয়, হরমোন রোগ সহ আরো অনেক জটিল সমস্যার কারণ। তাই একজন রক্ত রোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ ব্যতিত অপ্রয়োজনে আমরা থ্যলাসেমিয়া রোগীর আর একটি ও রক্ত পরিসান্চলন না করি।
রোগমুক্তি: দুই উপায়ে এ রোগ হতে মুক্তি লাভ সম্ভব।
১) জীন থেরাপি: যা এখনও এদেশে হচ্ছে না।
২) আ্যলোজেনিক স্টেমসেল ট্রান্সপ্লান্ট: এ পদ্ধতিতে এই জটিল রোগ থেকে সম্পূর্ণ মুক্তি লাভ সম্ভব। ঢাকা মেডিকেল কলেজে হাসপাতালের হেমাটোলজি ও বোনম্যারো ট্রান্সপ্লান্ট বিভাগে ইতিপূর্বে সফলভাবে অত্যন্ত সুলভে আ্যলোজেনিক স্স্টেমসেল ট্রান্সপ্লান্ট সম্পন্য হয়েছে। এছাড়া বর্তমানে সিএম এইচ এবং এভারকেয়ার হাসপাতালে আ্যলোজেনিক স্স্টেমসেলট্রান্সপ্লান্ট করছে।
সুতরাং, আসুন এ রোগ প্রতিরোধে আমরা সকলে এগিয়ে আসি। একজন থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত রোগীর রোগের অন্তর্নিহিত কারণ, জটিলতা পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে নিরূপণ করে চিকিৎসা দিলে এ রোগ সম্পূর্ন নিয়ন্ত্রণ এমনকি নির্মূল করা সম্ভব।
Last Updated on 05/08/2021 by Editorial Staff
Comments
৮ই মে আন্তর্জাতিক থ্যালাসেমিয়া দিবস — No Comments
HTML tags allowed in your comment: <a href="" title=""> <abbr title=""> <acronym title=""> <b> <blockquote cite=""> <cite> <code> <del datetime=""> <em> <i> <q cite=""> <s> <strike> <strong>