হিমোফিলিয়া রোগিদের জন্য চাই সদিচ্ছা
লিখেছেন অধ্যাপক সালমা আফরোজ
রাত ১১টা বাজে মোবাইলে অচেনা কল আসে । ভয় পেয়ে ফোন ধরতেই ওপাশ থেকে কান্নাজড়িত গলায় বলে উ়ঠে “ম্যাডাম আমার বাচ্চাটাকে বাচান । পড়ে গিয়ে ওর ঠোট কেটে গেছে খুব রক্ত পরছে। কি বলবো কি রুগী কিছুই জানিনা । উনি বলেন বাচ্চার হিমোফিলিয়া ৩ বছর আগে আমার কাছে ভরতি ছিল । হেলথ কমপ্লেক্সে বা কাছাকাছি মেডিক্যাল কলেজে নিতে বলি । কোন কিছুই কাছাকাছি নেই । প্রয়োজনীয় কিছুই কাছে নেই আবার অনেক হাসপাতালে এ রুগী রাখতে চায় না । যতটুকু উপদেশ সম্ভব দিলাম । সারারাত অস্থিরতার মধ্য কাটল । ওর পরিবারের অসহায়ত্তের কথা বারবার মনে হোল ।
পাবনা থেকে ১৮/১৯বছরের রুগী আসলো। বাম পা টা হাটুর উপড় থেকে অসম্ভব ফুলে আছে । চামড়া টান টান হয়ে আছে । যন্ত্রনায় কাতরাচ্ছে। খুব গরীব । তাই ডাক্তারের নিষেধ সত্বেও শ্রমিকের কাজ করতো । পা টা দিনদিন ফুল়ছিলো । টাকার অভাবে কিছুই করতে পারেনি । চিকিতসার কোন কিছনই পাওয়া যায় নি পাবনাতে । ঢাকায় আসার টাকা জোগাড় করতে অনেক দেরী হয়েছিল । আবার টাকার অভাবে ফিরে যেতে হয়েছিল । কয়দিন পর ওর মৃত্যুর খবর পেলাম ।
উপরে যে রুগীদের কথালিখলাম ওরা অস্বাভাবিক রক্তপাতের রুগী । আমরা আঘাত পেলে বা কোন জায়গা কেটে গেলে স্বাভাবিক নিয়মে একটু পর রক্ত জমাট বেধে রক্ত বন্ধ হয় ।রক্তের কতগুলো উপাদান প্রয়োজন । এর মধ্য ৮ ও ৯ উপাদান হিমোফিলিয়া রুগীদের কম বা একবারেই থাকেনা । তাই ওদের অনেক বেশী রক্ত পরে । এই ফ্যাক্টর বা উপাদান x ক্রোমজম তেরী করে । এই রুগীর অসুস্থ x ফ্যাক্টর তেরী করতে পারেনা । ছেলেদের xyএকটা x থাকায় ফাক্টর অভাব হয় তাইরক্ত বন্ধ হতে চায় না । কিন্তু মেয়েদের x x থাকায় অসুস্থ একটা x থাকলেও অন্য x ফ্যাক্টর তৈরী করায় এই রোগে ভোগে না শুধুমাত্র বহন করে । ছেলেরা মায়ের কাছ থেকে এই রোগ পেতে পারে । কিছু রুগীর পরিবারে এই রোগ না ও থাকতে পারে ।
হিমোফিলিয়ার প্রধান উপসগ অস্বাভাবিক রক্তপাত তা শরীরের বাইরে বা ভিতরে হতে পারে । কত খানি ফ্যাকটর তার উপর উপসগ নিরভর করে । নিজ থেকে বাআঘাতে রক্ত ক্ষরন হয় । ভার বহন করে এমন জয়েন্টই বেশী ক্ষতি হয় । পরে জয়েন্ট কাজ করে না রুগী পঙ্গু হয়ে পড়ে । কেউ কেউ রক্ত পড়তে পড়তে মারা যায় ।
আমাদের দেশে এই রুগীদের রোগ নিরধারন ব্যাবস্থা সীমিত ও ব্যায়বহুল । চিকিতসার জন্য প্রয়োজনীয় ফ্যক্টর অপ্রুতল ও দামি হওয়ায় বেশীরভাগ রুগীই পযাপ্ত চিকিতসা নিতে না পারায় পঙ্গু হয়ে থাকে । অন্ততপক্ষে সব সরকারী হাসপাতালে কমমুল্যে পরীক্ষা করা গেলে অনেক রুগী ডায়াগনোসিস হোত । আবার ইমারজেন্সীর জন্য ফ্যাক্টর সাপ্লাই থাকলে অনেক কষ্ট কমানো যেত । অন্ততপক্ষে মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালগুলোতে প্লাজমা রক্ত থেকে আলাদা করে রাখার ব্যাবস্থা করলে খুব সহজেই রুগী কিছু সেবা পেত । আর এজন্য শুধু সদিচ্ছারই প্রয়োজন ।
অনেক রুগী আমাদের চোখের আড়ালে ওদের কাছে আনি । সেবা পাবার অধিকার দেই । বিশ্ব হিমোফিলিয়া দিবসে রুগী ও ওদের পরিবারের জন্যসহমর্মিতা ও শুভকামনা ।
।
Last Updated on 05/04/2020 by Editorial Staff
Comments
হিমোফিলিয়া রোগিদের জন্য চাই সদিচ্ছা — No Comments
HTML tags allowed in your comment: <a href="" title=""> <abbr title=""> <acronym title=""> <b> <blockquote cite=""> <cite> <code> <del datetime=""> <em> <i> <q cite=""> <s> <strike> <strong>