প্লাজমা থেরাপির আদ্যপান্ত
লিখেছেনঃ ডাঃ শাফিউল আজম
করোনা চিকিৎসায় #প্লাজমা_থেরাপি বর্তমানে বহুল আলোচিত বিষয়। এটি আদৌ কার্যকর হবে কিনা সেটি বলার সময় এখনো আসে নি। এখনো এটি ট্রায়াল ফেজে আছে। অধিকতর গবেষণা ও ট্রায়ালের মাধ্যমে এর কার্যকারিতা প্রমাণিত হতে হবে। সে আলোচনার ক্ষেত্র আলাদা। তবে সাধারণ কিছু কথা সবার সাথে শেয়ার করার উদ্দেশ্যেই এই লেখা-
#কি_এই_প্লাজমা_থেরাপি?
রক্তের ২ টি অংশ –১. কোষ২. জলীয় (সাদা) অংশমূলত এই জলীয় অংশকেই আমরা প্লাজমা বলি। কোন ব্যক্তি আক্রান্ত হয়ে পূর্ণ সুস্থ হওয়ার পর তার প্লাজমা সংগ্রহ করে নতুন আক্রান্ত রোগীকে দেয়ার মাধ্যমে যে চিকিৎসা পদ্ধতি সেটাই প্লাজমা থেরাপি।
#কেন_এই_প্লাজমা_থেরাপি?
আক্রান্ত ব্যাক্তির ইমিউনিটি বৃদ্ধির জন্য এটি ব্যবহৃত হয়।
#কিভাবে_কাজ_করে?
বাইরের কোন জীবাণু দ্বারা আক্রান্ত হলে আপনার শরীর এদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে। যুদ্ধের জন্য প্রয়োজন হয় সৈন্যের। আর এই সৈন্য গুলিকে আমরা বলি এন্টিবডি। এন্টিবডি গুলো জীবাণুর সাথে ফাইট করে আপনাকে জয়ী করবে। যত বেশি এন্টিবডি আপনার জয়ী হওয়ার চান্স তত বেশি। এন্টিবডি বেশি মানে আপনার ইমিউনিটি বা রোগ প্রতিরোধী ক্ষমতা ভালো। এই এন্টিবডি রোগীর নিজের শরীরে তৈরী হতে পারে, আবার অন্য কোথাও তৈরী হওয়া এন্টিবডি রোগীর শরীরে ঢোকানো যেতে পারে। যখন এন্টিবডি রোগীর শরীর নিজে থেকেই তৈরী করতে পারে তখন সেটাকে বলে একটিভ ইমিউনাইজেশন। আর বাইরে থেকে এন্টিবডি দিয়ে যে প্রতিরোধ তৈরী করা হয় তাকে বলে প্যাসিভ ইমিউনাইজেশন। প্লাজমা থেরাপির মাধ্যমে আমরা প্যাসিভ ইমিউনাইজেশন তৈরী করি আর টীকার মাধ্যমে তৈরী হয় একটিভ ইমিউনাইজেশন।
#প্যাসিভ_ইমিউনাইজেশন_কি_আগে_ব্যবহৃত_হয়েছ?
অবশ্যই হয়েছে, অনেক আগেই হয়েছিল।
১. এমন কি স্প্যানিশ ফ্লু’র সময়েও হয়েছিল। যদিও সে সময় ইমিউনিটি নিয়ে এতটা ধারণা ছিল না।
২. ইবোলা ভাইরাসের চিকিৎসায় ১৯৯৫ সালে কঙ্গো এবং পরবর্তীতে গিনিতে ব্যবহার হয়েছিল। সেখানে কোন জটিল প্বার্শপ্রতিক্রিয়া হয়নি এবং মৃত্যুহারও কমে গিয়েছিল।
৩. H1N1 এর চিকিৎসায় এটি ব্যবহার হয়েছিল।
তবে আমরা এটাও জানি এই অসুখগুলো আর করোনা সম্পূর্ণ আলাদা।
তাহলে প্রশ্ন হলো করোনার ক্ষেত্রে প্লাজমা থেরাপির ভূমিকা কি?বর্তমানের করোনা অর্থাৎ কোভিড-১৯ আসার আগে আরো ২ টি করোনার সংক্রমণ ছড়িয়েছিল, SARS- করোনা ও MERS- করোনা। এর মাঝে SARS-করোনার চিকিৎসায় প্লাজমা থেরাপি ব্যবহৃত হয়েছিল হংকং ও তাইওয়ানে। ফলাফলে দেখা যায়, প্লাজমা থেরাপি পাওয়া রোগীদের মধ্যে মৃত্যুহার কম, তারা দ্রুত ভালো হয়ে উঠেছে এমনকি হাসপাতাল থেকে দ্রুত ছাড়া পেয়ে বাড়ি যেতে পেরেছে। তাইওয়ানে এমন কিছু স্বাস্থসেবা প্রদানকারীদের এই প্লাজমা থেরাপি দেয়া হয় যাদের ক্ষেত্রে অন্য কোন চিকিৎসাই কাজ করছিল না। পরবর্তীতে এরা সবাই সুস্থ হয়ে ওঠেন।
#তাহলে_কোভিড১৯_এর_ক্ষেত্রে_কার্যকারিতা_কেমন?
চীনের উহানে ১ টি স্টাডি হয়েছে। সেখানে ১০ জন কোভিড আক্রান্ত রোগী নেয়া হয়। এই রোগীগুলো সকলেই বিভিন্ন ধরনের এন্টি ভাইরাল, এন্টিবায়োটিক, এন্টিফাংগাল, অক্সিজেন সহ অন্যান্য প্রথাগত চিকিৎসা পেয়ে আসছিল। এদের প্রত্যেককে ২০০ মি,লি, করে প্লাজমা দেয়া হয়। কারো জটিল কোন প্বার্শ প্রতিক্রিয়া হয়নি। ফলাফলে দেখা যায় ১-৩ দিনের মাঝে সব উপসর্গ গুলোর উন্নতি হচ্ছে, অক্সিজেন কম দেয়া লাগছে, অক্সিজেন স্যাচুরেশন বাড়ছে, রক্তের সব খারাপ মার্কার গুলোর উন্নতি হচ্ছে। নিউমোনিয়ার উন্নতি পাওয়া গেছে ৭ দিনে। এমনকি ৭ দিনের মাথায় রক্তে আর ভাইরাস পাওয়া যাচ্ছে না।
#কোন_ধরনের_রোগীর_জন্য_প্রয়োজন?
১. করোনা টেস্ট পজিটিভ এবং২. গুরুতর রোগী বা জীবন-শংকায় থাকা রোগী
নিচের যে কোন ১টি থাকলেই সে গুরুতর রোগী• শ্বাসকষ্ট• শ্বাসপ্রশ্বাস এর হার ≥ ৩০/মিনিট,• রক্তে অক্সিজেন স্যাচুরেশন ≤ ৯৩%,• আর্টেরিয়াল অক্সিজেন ও ইন্সপায়ার্ড অক্সিজেনের আংশিক চাপের অনুপাত < ৩০০, • লাং ইনফিলট্রেটস > ৫০% ২৪-৪৮ ঘন্টার মধ্যে
#নিচের_যে_কোন_একটি_থাকলেই_সে_জীবনাশংকায়_থাকা_রোগী
• রেস্পিরেটরি ফেইলিউর,
• সেপটিক শক,
• মাল্টিপল অর্গান ডিজফাংশন অর ফেইলিউর।
কে প্লাজমা দিতে পারবে?করোনা থেকে সেরে ওঠা রোগী।
১. যার রোগ পরীক্ষা করে নিশ্চিত করা হয়েছিল।
২. উপসর্গ সম্পূর্ণ রূপে চলে যাওয়ার দিন থেকে প্লাজমা দানের দিন পর্যন্ত কমপক্ষে ১৪ দিনের বিরতি আছে (নেগেটিভ টেস্টের সাথে সম্পর্ক নাই)।
৩. যে কোন পুরুষ বা গর্ভবতী নয় এমন মহিলা।
৪. যদি সম্ভব হয় তো এন্টিবডি পরিমাপ করে দেখতে হবে। (১ঃ১৬০ ভালো, তবে১ঃ৮০ নেয়া যেতে পারে)
৫.এন্টিবডি পরিমাপ সম্ভব না হলেও নেয়া যাবে। তবে এক্ষেত্রে কিছুটা স্যাম্পল পরবর্তীতে পরীক্ষা করার জন্য আলাদা করে রেখে দিতে হবে।
রক্তের গ্রুপের মিল সহ রক্ত দানে সক্ষমতার অন্যান্য গুণাবলি থাকতে হবে।
সবশেষে এটা বোধহয় বলাই যায়- যেহেতু টীকা আবিস্কার এখনও হয়নাই তাই দ্রুত ইমিউনিটি বৃদ্ধিতে প্যাসিভ ইমিউনাইজেশনই অন্যতম ভরসা।
তথ্যসূত্র:
১. Effectiveness of convalescent plasma therapy in severe COVID-19 patients
২. Coronavirus drugs: Using plasma from recovered patients as a treatment for COVID-19
৩. FDA guideline for convalescent plasma
Last Updated on 19/07/2020 by Editorial Staff
Comments
প্লাজমা থেরাপির আদ্যপান্ত — No Comments
HTML tags allowed in your comment: <a href="" title=""> <abbr title=""> <acronym title=""> <b> <blockquote cite=""> <cite> <code> <del datetime=""> <em> <i> <q cite=""> <s> <strike> <strong>