থ্যালাসেমিয়া এবং একটি যুদ্ধের গল্প
থ্যালাসেমিয়া একটি বংশগত রোগ। থ্যালাসেমিয়া একটি গ্রিক শব্দ। এর মানে হচ্ছে বাংলায়, সমুদ্র। এটি Mediterranean অঞ্চলের অধিবাসীদের মধ্যে ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে। দুইজন থালাসেমিয়া বাহকের মধ্যে যখন বিয়ে হয় তখন তাদের যে বাচ্চা হয় মেন্দেলিয়ান এর সুত্র মতে ২৫% সম্ভাবনা থাকে থ্যালাসেমিয়া মেজর এর বাচ্চা হওয়া। থ্যালাসেমিয়া মেজর হচ্ছে থেলাসেমিয়ার সবচেয়ে খারাপ ধরন যেটিতে মাসে মাসে রক্ত দেয়া লাগে। এছাডাও রয়েছে থালাসেমিয়া ইন্টারমিডিয়া যা পরবর্তীতে থ্যালাসেমিয়া মেজর এ পরিবর্তিত হতে পারে। থ্যালাসেমিয়া রোগীদের সবচেয়ে বড সমস্যা রক্ত জোগাড় করা ।
প্রতিমাসে রক্ত জোগাড় করতে আমাদের দেশের গরীব পরিবারদের অবস্থা কাহিল হয়ে যায়। যেখানে প্রতি মাসে রক্ত দেয়া লাগে , সেখানে তারা রক্ত দেয় দুই বা তিন মাস পরপর। যদি এক পরিবারে একাধিক রোগী থাকে তাহলে সেই পরিবার আরও আসহায়। আমার পরিচিত এক পরিবারে তিন সন্তানই থালাসেমিয়ায় আক্রান্ত। রক্ত দিতে দেরি হবার কারনে এইসব বাচ্চাদের বৃদ্ধি কম হওয়া, মাথার আকৃতির পরিবর্তন, পেটের চাকা বড হওয়া, হরমনের সমস্যা সহ নানা সমস্যা দেখা দেয়। আবার রয়েছে রক্ত দেবার কারনে রক্তে অতিরিক্ত আয়রনের উপস্থতিতি।
থ্যালাসেমিয়া রোগীদের চিকিৎসা অত্যন্ত ব্যয়বহুল । এর মুল চিকিৎসা অস্থিমজ্জা প্রতিস্থাপন। এটি অত্যন্ত ব্যয়বহুল এবং আমাদের দেশে এখনও শুরু হয়নি। আমাদের দেশের রোগীদের রক্ত যাতে কম দেয়া লাগে তার জন্য আমারা রক্ত রোগ বিশেষজ্ঞরা বিভিন্ন মুখের ঔষধ দিয়ে চেষ্টা করি যাতে রোগীরা একটু ভাল থাকে। আসুন একটি যুদ্ধের গল্প শুনি।
একটি যুদ্ধের গল্প
লিটনের বয়স ৩৭ বছর। একজন ই বিটা থ্যালাসেমিয়ার রোগী। ২৫ বছর বয়সে হঠাৎ করে তার রক্ত শূন্যতা ধরা পড়ে। নানা পরীক্ষার পর ধরা পড়ে সে থ্যালাসেমিয়ার রোগী। প্রতি বছর সে দুই থেকে তিন ব্যাগ দিত। গত তিন বছর যাবত প্রতিমাসে এক ব্যাগ করে তার রক্ত লাগে। তার স্ত্রী বেটা থ্যালাসেমিয়া বাহক। তাদের একমাত্র মেয়েটি বেটা থেলাসামিয়া মেজর। তারও প্রতি মাসে রক্ত দেয়া লাগে । তার বয়স ছয় বছর । লিটন ছোট একটি চায়ের দোকান চালায়। যা আয় করে তার পুরোটাই চলে যায় রক্তের পিছনে। আমি প্রতি সপ্তাহে একদিন ফেনী শহরের একটি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে রোগী দেখি। গত বছরের জুলাই মাসে আমার চেম্বারে তার মেয়েকে নিয়ে আসে। লিটন কে প্রথমে তিন মাস খাওয়ার জন্য একটি ঔষধ দেই হেমগ্লবিন বাড়ার জন্য । সাথে তার মেয়েকেও দেই। লিটনের আয়রন বেশি থাকার কারনে তাকে Iron Chelator দেয়া হয়। তিন মাস পর লিটনের হিমোগ্লোবিন না বাড়ার কারনে তার ওষুধ পরিবর্তন করে আরেকটি ওষুধ দেই। সেপ্টেম্বর মাসে তার হিমোগ্লোবিন ছিল ৬.৫ gm/dl. ডিসেম্বর মাসে তার হিমোগ্লোবিন ছিল ৯.৯ gm/dl কোন রক্ত না দিয়ে। এবার লক ডাউন এর পর আবার চেম্বার শুরু করলে লিটনের দেখা পাওয়া গেল। এবার ওর হিমোগ্লোবিন ছিল ১০.১ gm/dl। ওর মেয়ের ও আগের থেকে রক্ত দেয়া কমে গেছে। রক্ত নেয়ার কষ্ট থেকে আপাতত মুক্তি পেয়ে লিটন একটু এখন স্বস্ত্বির নিশ্বাস ফেলছে। এরকম স্বস্ত্বির নিশ্বাস ফেলা রোগীর সংখ্যা অনেক।
কোথায় পাবে এর চিকিৎসা
বাংলাদেশের সব বড় মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে যেখানে হেমাটলজি বিভাগ রয়েছ সেখানেই থ্যালাসেমিয়া রুগীদের চিকিৎসা হচ্ছে। সরকার থেকেও এই অসহায় রোগীদের জন্য আর্থিক সহযোগিতার ব্যবস্থা রয়েছে। নিয়মিত ফলো আপ এই সব রোগীর জন্য সবচেয়ে জরুরী। আমাদের দেশে বর্তমানে এই রোগের চিকিৎসার সব ওষুধ পাওয়া যায়।
Last Updated on 31/08/2020 by Editorial Staff
Comments
থ্যালাসেমিয়া এবং একটি যুদ্ধের গল্প — No Comments
HTML tags allowed in your comment: <a href="" title=""> <abbr title=""> <acronym title=""> <b> <blockquote cite=""> <cite> <code> <del datetime=""> <em> <i> <q cite=""> <s> <strike> <strong>