ঢামেক হেমাটোলজি বিভাগে পুনরায় বোনম্যারো ট্রান্সপ্লান্ট শুরু
জনবিচরণ ব্যতিরেকে মহেঞ্জোদারো আর হরপ্পার মত সমৃদ্ধ জনপদও হারিয়ে গিয়েছিল ভূতলে। অনেকটা তেমন পরিস্থিতির তূল্য অবস্থা হয়েছিল হেমাটোলজি বিভাগ, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল -এর বিএমটি ইউনিটের, দীর্ঘ কোভিডকালীন বন্ধ থাকার কারনে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার স্বাস্থ্য খাতের রূপকল্প অনুযায়ী ২০১৩-১৪ সালে তৎকালীন মাননীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী অধ্যাপক এ এফ এম রুহুল হক মহোদয়ের সরাসরি তত্বাবধানে, দুই কর্মবীর বাংলাদেশী আমেরিকান বিশেষজ্ঞ ডাঃ বিমলাংশু দে ও সাবেক বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক এম এ খান -এর উদ্যোমে প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশের স্বাস্থ্যখাতের ইতিহাসে বৈপ্লবিক এই ইউনিটকে প্রায় পুরোপুরি বিধ্বস্ত ও বিপর্যস্ত অবস্থা থেকে বিভাগের সকল ফ্যাকাল্টি, কর্মকর্তা, ছাত্র, নার্স, কর্মচারীদের পরিশ্রমে ও উদ্যোমে আবার চালু করা কীভাবে সম্ভব হল সে গল্প আমাদেরই থাক, পরে কখনো বলার জন্য।
এই ইউনিটের প্রতিষ্ঠার সাথে জড়িত থাকার অভিজ্ঞতা, সেই সাথে মাননীয় মহাপরিচালক, স্বাস্থ্য সেবা অধিদপ্তর, অধ্যাপক এবিএম খুরশীদ আলম; সাবেক অধ্যক্ষ, বর্তমান মহাপরিচালক, স্বাস্থ্য শিক্ষা, মাননীয় অধ্যাপক টিটু মিয়া ও মাননীয় পরিচালক ব্রি. জে. ডা. নাজমুল হক -এর অব্যাহত যুগপৎ অনুপ্রেরনা ও তাগাদা ছিল এই ইউনিটের কার্যক্রম পুনরারম্ভের মূল চালিকাশক্তি। লাইন ডিরেক্টর, হাসপাতাল সেবা ব্যবস্থাপনা, অধ্যাপক মাজহারু হক তপন তথা আমার তপন ভাই এর প্রতি কৃতজ্ঞতা না জানালে এই লেখা সম্পূর্ণ হয় না, যিনি যখন তখন আমার সব আব্দার শুনেছেন এবং সাধ্যমত পূরন করেছেন। আমার অসাধারণ সহকর্মীবৃন্দের কথা পরে কখনও বলব; তবে একজন উজ্জ্বল পার্শ্ব চরিত্রের কথা বলতেই হয়, তিনি শেখ হাসিনা বার্ণ ও প্লাস্টিক সার্জারী ইন্সটিটিউট এর Transfusion Medicine এর ডাঃ আশরাফুল হক, যার অবদানের কথাও পরে কখনো বলব।
আমরা ধন্যবাদ দিতে চাই আমদের এই পূনর্জন্মের সঙ্গী রোগীদেরকে যারা আমাদের উপরে আস্থা রেখে আমাদেরকে মানবতা ও বিজ্ঞানের কল্যাণে কাজ করার সুযোগ করে দিচ্ছেন।
সব শেষে অশেষ কৃতজ্ঞতা মাননীয় মন্ত্রী, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়, জনাব জাহিদ মালেক এমপি এবং সচিব, স্বাস্থ্য সেবা মহোদয় ও সচিব, স্বাস্থ্য শিক্ষা মহোদয়ের প্রতি, যাঁদের তীক্ষ্ন নজরদারী আমাকে নিরন্তর বিএমটি সেবা পুনঃপ্রতিষ্ঠার কাজে ব্যস্ত রেখেছে।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বিএমটি ইউনিটের ভবিষ্যৎ নিয়ে দেশবাসী, মিডিয়া ও উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের শংকা নিরসনে চুড়ান্ত (রোগী বাছাই ও প্রস্তুতিমূলক চিকিৎসা) কাজ শুরু করি গত জুলাই ২০২২ থেকে। অবশেষে জানুয়ারী ১২, ২০২৩ তারিখে কোভিড পরবর্তী প্রথম অস্থিমজ্জ্বা কোষ প্রতিস্থাপন করা হয়।
বিএমটি ইউনিটের এই পূনর্জন্ম উদযাপনে আজ আমাদের সঙ্গী ছিলেন মাননীয় অধ্যক্ষ অধ্যাপক শফিকুল আলম চৌধুরী, উপাধ্যক্ষ অধ্যাপক আবু হানিফ টাব্লু, স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যান বিভাগের যুগ্ম সচিব মল্লিকা খাতুন, ডীন ডাঃ শাহরিয়ার নবী শাকিল (আমার শাকিল ভাই) ও ঢাকা মেডিকেল কলেজ শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক বন্ধু ডাঃ আহমেদ হোসেন হারুন সহ নেতৃবৃন্দ। ট্রান্সফিউশন মেডিসিন, মাইক্রোবায়োলজি, রেডিওলজি, নেফ্রলজি, এনেসথেসিওলজি, এন্ডেক্রাইনোলজি সহ যে সব বিভাগের সক্রিয় সহায়তা ছাড়া বিএমটি অচল তাঁদের অনেকের সদয় উপস্থিতিতে আমরা হেমাটোলজি বিভাগ কৃতজ্ঞ ও সম্মানিত।
আমরা মিস করেছি মাননীয় পরিচালক ব্রি. জে. মো. নাজমুল হক মহোদয়কে। তবে ফেসটাইম ভিডিও কলে যুক্ত ছিলেন Massachusetts General Hospital এর বিএমটি বিশেষজ্ঞ ও হারভার্ড মেডিকেল স্কুলের অধ্যাপক ডা. বিমলাংশু দে, যিনি তাঁর সহকর্মী বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ও নার্সিং টিমসহ আমাদেরকে বৈজ্ঞানিক, বুদ্ধিবৃত্তিক ও কারিগরি সহায়তা ও পরামর্শ দানে দিনে রাতে অবিশ্বাস্য রকম অক্লান্ত।
আমাদের আজকের উদযাপনের আনন্দ দ্বিগুন বাড়িয়ে দিয়েছে আজই জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইন্সটিটিউট ও হাসপাতালের হেমাটোলজি বিভাগে মাননীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী জনাব জাহিদ মালেক, এমপি কর্তৃক সরকারী স্তরে দেশের ২য় বিএমটি ইউনিটের নির্মানকাজের উদ্বোধনের ঘোষনা।
শত সীমাবদ্ধতা নিয়েও ধীর পায়ে যাত্রা শুরু করেছি আবার; কারন, যেতে হবে বহুদুর। একদল অক্লান্ত, উদ্যমী কর্মী আছে সাথে; সেই সাথে সকলের সমর্থন, আস্থা আর শুভেচ্ছা থাকলে পথে ছুটব দ্রুতই, এ বিশ্বাস আছে।
Last Updated on 08/02/2023 by Editorial Staff
Comments
ঢামেক হেমাটোলজি বিভাগে পুনরায় বোনম্যারো ট্রান্সপ্লান্ট শুরু — No Comments
HTML tags allowed in your comment: <a href="" title=""> <abbr title=""> <acronym title=""> <b> <blockquote cite=""> <cite> <code> <del datetime=""> <em> <i> <q cite=""> <s> <strike> <strong>