ডেঙ্গু জ্বরে আতঙ্ক নয়, সতর্ক থাকুন
লিখেছেন ডাঃ সুরজীৎ সরকার তিতাস
ডেঙ্গু কি
ডেঙ্গু একটি ভাইরাস সংক্রমিত রোগ। ডেঙ্গু নামক একধরনের আরবোভাইরাস সংক্রমণে এ রোগ হয়। চার ধরনের ডেঙ্গু ভাইরাস রয়েছে ডেঙ্গু-১, ডেঙ্গু-২, ডেঙ্গু-৩ ও ডেঙ্গু-৪। আমাদের দেশে ডেঙ্গু-৩ এর সংক্রমণ বেশি। সাধারণত এই চার প্রজাতির যেকোন একটি দিয়ে ডেঙ্গু জ্বর হয়ে থাকে তবে একের অধিক প্রজাতিও একই সাথে সংক্রমিত হতে পারে। একাধিক প্রজাতির সংক্রমণ রোগের জটিলতা বাড়ায়।
এডিস মশা ডেঙ্গু ভাইরাসের বাহক হিসেবে কাজ করে। দুই ধরনের এডিস মশা ডেঙ্গু ভাইরাস বহন করে। এদের জীবন চক্রের একটা পর্যায়ে খাদ্য হিসেবে রক্তের প্রয়োজন হয়। মশা সেই রক্ত সংগ্রহের অংশ হিসেবেই মানুষকে কামডায়। যখন কোন আক্রান্ত মানুষকে কামড়ায় তখন ভাইরাস মশার শরীরে প্রবেশ করে। আক্রান্ত মশা যখন আবার সুস্থ মানুষকে কামড়ায় তখন এর মাধ্যমেই মশার শরীরে থাকা ভাইরাস মানুষের শরীরে প্রবেশ করে। ভাইরাস মশার কামড়ের মাধ্যমে রক্তে প্রবেশের পর ৪ থেকে ১০ দিন সুপ্ত অবস্থায় থাকে এরপর রোগ লক্ষণ প্রকাশ পেতে শুরু করে।
কখন ডেঙ্গু হয়
আমাদের দেশে সাধারণত বর্ষাকালে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব দেখা যায়। ২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের কাছাকাছি তাপমাত্রা এবং ৮০% এর কাছাকাছি আর্দ্রতা ডেঙ্গু ভাইরাস এবং এর বাহক এডিস মশার জন্য উপযোগী। বর্ষা কালে আর্দ্রতা ও তাপমাত্রা উপযোগী থাকে বিধায় বর্ষা মৌসুমে এর সংক্রমণ দ্রুত ঘটে। বর্ষা কালে ছোট ছোট জলাধার, বাড়ির ছাদে জমে থাকা পানি, নির্মানাধীন ভবনের ছাদ, ফুলের টব, ফেলে দেওয়া বাসন, ডাবের খোসা, পরিত্যক্ত টায়ার বা এধরনের জমে থাকা পানিতে এডিস মশা বংশ বিস্তার করে। একারণেই বাড়ির আশপাশের ছোট ছোট জলাধার গুলোর ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। এডিস মশার ডিম কখনও কখনও শুষ্ক অবস্থায় এক বছরের অধিককাল বেঁচে থাকতে পারে। তবে পানির সংস্পর্শে আসার ২৪ ঘন্টার মধ্যে এগুলো থেকে মশার জন্ম হয়।
বাংলাদেশে ডেঙ্গু ভাইরাস এবং এর বাহক সব সময়ই থাকে তবে অনুকুল পরিবেশে এর বিস্তার ঘটে। প্রথম মহামারি হিসেবে দেখা দেয় ২০০০ সালের মাঝামাঝি। এর পর থেকে প্রায় প্রতি বছরই বিভিন্ন মাত্রায় এটা ছিল। তবে এবার দেশব্যাপী এর বিস্তার অধিক।
কি করে বুঝবেন ডেঙ্গু হয়েছে কিনা
কিছু লক্ষণ দেখেই ডেঙ্গু বুঝতে চেষ্টা করা হয়। যদিও অন্য অনেক ভাইরাস সংক্রমিত রোগের লক্ষণ আর ডেঙ্গুর লক্ষণের মধ্যে কোন পার্থক্য দেখা যায়না। তবু কিছু লক্ষণের সমন্বয়ে ডেঙ্গু সম্পর্কে একটা ধারণা করা হয়। এক্ষেত্রে চিকিৎসকের সন্দেহই রোগ নির্ণয়ের প্রাথমিক ধাপ। ডেঙ্গুর মৌসুমে যেকোন জ্বরকেই বিবেচনায় নিতে হবে যতক্ষণ না পরীক্ষার মাধ্যমে নিশ্চিত হওয়া যায়।
ডেঙ্গু জ্বর অনেক ধরনের হয়ে থাকে। এর মধ্যে কিছু জ্বর অন্য ভাইরাল জ্বর থেকে আলাদা করা যায়না এদের বলে আনডিফারেনশিয়েটেড ফিভার। বেশির ভাগই ক্লাসিকাল অর্থাৎ ডেঙ্গু জ্বরের যে নির্ধারিত ধরন তা মেনে চলে। যখন ডেঙ্গু জ্বরে রক্তপাত প্রবণতা দেখা দেয় তখন বলা হয় হিমোরেজিক ডেঙ্গু। এর সাথে যদি রোগীর ব্লাড প্রেশার কমে যায় এবং হৃদপিণ্ডের গতি অর্থাৎ পালস রেট বেড়ে যায় তবে তাকে বলা হয় ডেঙ্গু শক সিন্ড্রোম। তবে মনে রাখতে হবে ডেঙ্গু ভাইরাস সংক্রমণ হলে ডেঙ্গু জ্বর হবেই এমন কোন কথা নেই। বিরাট সংখ্যক সংক্রমণ জ্বর হিসেবে প্রকাশ পায়না।
ক্লাসিকাল ডেঙ্গুতে জ্বরের সাথে প্রচন্ড শরীর ব্যাথা হয়। বিশেষত কোমরে, মাংস পেশীতে এবং গিরায় গিরায় ব্যাথা হয়। চোখের পেছনে ব্যাথা হয়। অনেক সময় এদিক সেদিক তাকাতেও ব্যাথা অনুভব হয়। কখনও কখনও চোখে ঝাপসা দেখে। এছাড়া জ্বরের অন্য অনুসঙ্গগুলো যেমন বমি বমি ভাব, খাদ্যে অরুচি ও পেট ব্যাথা থাকতে পারে। র্যাশ ডেঙ্গু জ্বরের অতি পরিচিত এবং ভীতি জাগানিয়া লক্ষণ। সাধারণত ৫ম দিনে জ্বর ভাল হয়ে যায় এবং র্যাশসহ অন্যান্য জটিলতাগুলো দেখা দেয়।
হিমোরেজিক ডেঙ্গু জ্বরে র্যাশের পাশাপাশি চামড়ায় রক্ত ক্ষরণ, নাক দিয়ে রক্তপড়া, মাসিকে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ এমনকি পায়খানার সাথেও রক্ত যেতে পারে। আর অস্থিরতা, রক্ত চাপ কমে যাওয়া, নাড়ির স্পন্দন বেড়ে যাওয়া, প্রস্রাব কম হওয়া বা না হওয়া এবং শরীর ঠান্ডা হয়ে যাওয়া ডেঙ্গু শক সিন্ড্রোমের লক্ষণ। এছাড়া ডেঙ্গু জ্বরের জটিলতা হিসেবে শরীরের যেকোন গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ আক্রান্ত হতে পারে। এর ফলে জন্ডিস, কিডনি ফেইলর, খিঁচুনি, হার্টের সমস্যা, ফুসফুসের সমস্যাসহ নানাবিধ জটিলতা হতে পারে। ফলে মাঝে মাঝেই কিছু রোগীর কিডনি ফেইলর হয়। আবার কখনও কখনও রক্তের সবগুলো উপাদান কমে যায়। একইভাবে লিভার, হার্ট, ফুসফুস, ব্রেইনসহ প্রায় সকলগুরুত্বপূর্ণ অঙ্গই আক্রান্ত হতে পারে।
কিভাবে রোগ নির্ণয় করা হবে
ডেঙ্গু রোগ নির্ণয়ের প্রথম পদক্ষেপ হচ্ছে চিকিৎসকের অভিজ্ঞতালব্ধ বিবেচনাবোধ। এরপর বিভিন্ন পরীক্ষা নিরীক্ষার মাধ্যমে নিশ্চিত ভাবে রোগ নির্ণয় করা হয়। প্রাথমিক পর্যায়ে রোগ নির্ণয় জরুরী। কারণ তাতে অনেক জটিলতা পরিহার করা যায়।
ডেঙ্গু জ্বর সন্দেহ হলে জ্বরের প্রথম দিনেই CBC নামক পরীক্ষাটি করতে হবে। এই রিপোর্টকে বেসলাইন ধরে পরের রিপোর্টগুলোর মূল্যায়ন করতে হয়। NS1 antigen পরীক্ষাটি জ্বরের শুরু থেকে ৫ম দিন পর্যন্ত করা যায়। Dengue IgM পরীক্ষা ৫ম দিন থেকে করা যায়। এটি একবার পজেটিভ হলে পরবর্তী তিনমাস পর্যন্ত পজেটিভ থাকতে পারে। Dengue IgG অল্পমাত্রায় অনেক বছর পর্যন্ত থাকতে পারে। তবে নতুন করে পুনরায় আক্রান্তদের ক্ষেত্রে এর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে।
ডেঙ্গু রোগে রক্তের জটিলতা
ডেঙ্গুতে যে প্রাণহানি হয় তার মূল কারণ রক্ত সংক্রান্ত জটিলতা। আর দশটা ভাইরাল ইনফেকশনের সাথে এর পার্থক্যটাও মূলত এই রক্ত সংক্রান্ত জটিলতার কারণে। রক্তের প্রাত্যহিক পরিবর্তন পর্যালোচনা এবং তার সমাধান করাই ডেঙ্গুতে প্রাণহানি কমানোর একমাত্র উপায়।
ভাইরাস সংক্রমিত হলে রক্তে বিভিন্ন ধরনের রাসায়নিক অবমুক্ত হয়। এরফলে রক্তনালীগুলো অধিক মাত্রায় ছিদ্র হয়ে যায়। এসব ছিদ্র দিয়ে রক্তের প্লাজমা রক্তনালীর বাইরে চলে আসে। ফলে রক্তের ঘনত্ব বেড়ে যায়। একই সাথে ব্লাড প্রেশার কমতে থাকে। প্রয়োজনীয় রক্তের অভাবে গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গগুলো সঠিকভাবে কাজ করতে পারেনা।
ডেঙ্গুতে রক্তে অনেক রকম পরিবর্তন দেখা যায়। এই পরিবর্তনগুলো মূলত জ্বরের তৃতীয় দিন থেকে শুরু হয়ে ক্রমাগত অবনতি হতে থাকে এরপর দ্রুত উন্নতি হতে শুরু করে এবং এগারো দিনের পরে স্বাভাবিক হয়ে আসে। শুরুতে শ্বেত রক্ত কনিকার সংখ্যা বাড়লেও দ্রুতই তা কমে যায়। সাধারণত তৃতীয় থেকে পঞ্চম দিনের মধ্যে রক্তের প্লাটিলেট বা অণুচক্রিকা কমতে শুরু করে। স্বাভাবিক মানুষের শরীরে প্রতি মিলিলিটারে প্লাটিলেট থাকে ১৫০,০০০ থেকে ৪০০,০০০ । ডেঙ্গুতে এটা কমে ১০,০০০ এর নিচে আসতে পারে। প্লাটিলেট সাধারণত ৪০,০০০ এর নিচে নেমে গেলে চামড়ায় ছোট ছোট লাল লাল দাগ দেখা যায়। ২০,০০০ এর নিচে নেমে গেলে দাঁত ব্রাস করার সময় বা মাড়ি দিয়ে রক্ত পড়তে পারে। তবে ডেঙ্গুতে প্লাটিলেট কমে যাবার পাশাপাশি প্লাটিলেটের কার্য্যক্ষমতাও কমতে পারে। ফলে প্লাটিলেটের সংখ্যা এমনকি স্বাভাবিক থাকলেও রক্তক্ষরণ হতে পারে। তবে যখনই প্লাটিলেট সংখ্যা কমতে শুরু করে তখন থেকেই সতর্ক হতে হবে।
আগেই বলেছি ডেঙ্গু জ্বরে রক্ত নালি থেকে প্লাজমা বেরিয়ে যায় ফলে রক্ত ঘন হয়ে যায়। এটা ডেঙ্গু জ্বরের সবচেয়ে খারাপ লক্ষণ। রক্তের ঘনত্ব বোঝা যায় হেমাটোক্রিট বা Hct দেখে। জ্বরের তৃতীয় দিন থেকে এটা বাড়তে পারে। এটা বাড়তে শুরু করলে অবশ্যই হাসপাতালে ভর্তি হওয়া উচিত।
এছাড়াও রক্ত জমাট বাধার প্রক্রিয়ায় সমস্যা হতে পারে। কিছু কিছু লিভার এনজাইম যেমন AST, ALT বেড়ে যেতে পারে। রক্তে প্রোটিনের ঘনত্ব কমে যেতে পারে, সোডিয়ামের ও ক্যালসিয়ামের পরিমাণও কমতে পারে।
ডেঙ্গু হলে কি করবেন
ডেঙ্গু রোগী তিন ধরনের। প্রথম ধরণ হচ্ছে সন্দেহজনক, যারাই ডেঙ্গু মৌসুমে জ্বরে আক্রান্ত হবেন সবাই সন্দেহজনক। চিকিৎসক লক্ষণ দেখে যাদের ডেঙ্গু বলে মনে করবেন তারা সম্ভাব্য ডেঙ্গু রোগী। আর যারা পরীক্ষার মাধ্যমে নিশ্চিত হবেন তারা প্রকৃত ডেঙ্গু রোগী। সন্দেহজনক আর সম্ভাব্য রোগীই বেশি। নিশ্চিত ডেঙ্গু রোগী সংখ্যায় তুলনামূলক কম। কাজেই ডেঙ্গুতে আতঙ্কিত হবেন না। তবে অবশ্যই সতর্ক থাকতে হবে। মনে রাখবেন ডেঙ্গু যদি জটিল না হয় তবে খুব বেশি চিকিৎসার প্রয়োজন নেই। আর খুব অল্প সংখ্যক ডেঙ্গু রোগীরই জটিলতা হয়। বাংলাদেশে বিগত কয়েক বছর যাবৎই ডেঙ্গু হচ্ছে। তবে এবারের ডেঙ্গুর প্রকাশ একটু ভিন্ন। সেকারণেই জ্বর হলেই সাথে সাথে একজন ন্যূনতম এমবিবিএস চিকিৎসকের পরামর্শ নেবেন এবং তার পরামর্শ মেনে চলবেন।
জ্বরের শুরু থেকেই পর্যাপ্ত বিশ্রাম নেবেন। প্রতিদিন অন্তত দুই লিটার তরল খাবেন। শুধু পানি খাবেননা, আবার শুধু খাবার স্যালাইনও খাবেননা। কারন তাতে শরীরে লবনের ভারসাম্য নষ্ট হতে পারে। পানি, খাবারস্যালাইন, দুধ, ফলের রস, বার্লি, ডাবের পানি, রান্না করা পাতলা ডাল তরল হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন।
চিকিৎসকের পরামর্শ ব্যাতিত কোন ওষুধ খাবেননা। তবে জ্বর হলে প্যারাসিটামল টাবলেট বা সাপোজিটরি ব্যাবহার করতে পারেন। তবে ২৪ ঘন্টায় ৬ থেকে ৮ টার বেশি ট্যাবলেট না খাওয়াই ভাল। শিশুদের ক্ষেত্রে প্রতি কেজিতে ১৫ মিলিগ্রাম হিসেবে দিনে সর্বোচ্চ চারবার দেওয়া যাবে। তবে জ্বর ১০০ ডিগ্রির কাছাকাছি থাকলে ঈষদুষ্ণ পানি দিয়ে গা মুছে নিলেই জ্বর কমবে।
আবারও বলছি চিকিৎসকের পরামর্শ ব্যতীত ওষুধ খাবেননা। ডিসপিরিন বা এ জাতীয় ব্যাথার ওষুধ, প্রেডনিসোলোন বা স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধ, অপ্রয়োজনীয় এন্টিবায়োটিক কখনোই খাওয়া যাবেনা। যদি শরীরে লাল লাল দাগ হয়, নাক বা মুখ দিয়ে রক্ত আসে, বমির সাথে রক্ত আসে, কালো পায়খানা হয় বা মাসিকের অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হয় তবে সাথে সাথে চিকিৎসকের পরামর্শক্রমে হাসপাতালে ভর্তি হবেন। প্রয়োজনে জ্বরের ৫ম দিন থেকে ১১তম দিন পর্যন্ত ভর্তির প্রয়োজন হতে পারে। এছাড়াও যদি কারও পেট ব্যাথা হয়, ঘুম ঘুম ভাব হয়, শ্বাসকষ্ট হয় বা ৬ ঘন্টার অধিকাল প্রশ্রাব না হয় তবে জরুরী ভিত্তিতে ভর্তি হতে হবে।
ডেঙ্গু প্রতিরোধের উপায় কি
ডেঙ্গুর কার্যকরী কোন চিকিৎসা নেই। এখনও পর্যন্ত কোন টিকাও আবিষ্কৃত হয়নি। কাজেই ডেঙ্গু প্রতিরোধ সর্বোতভাবে ব্যক্তি সুরক্ষা আর মশা নিয়ন্ত্রণে পারিপার্শ্বিক পরিচ্ছন্নতার উপরই নির্ভরশীল। বাড়ির ছাদে, টবে, পরিত্যক্ত বাসনপত্র, বালতি, ডাবের খোসা, পলিথিন ব্যাগ বা এই জাতীয় জমে থাকা পানিতে এডিস মশার বংশ বিস্তার ঘটে। কাজেই এসব স্থির ক্ষুদ্র জলাধার নির্মূল করতে হবে। যদি কোন জলাধারে মশার বংশ বৃদ্ধি হচ্ছে বলে সন্দেহ হয় তবে আগে মশা মারার ওষুধ স্প্রে করতে হবে তারপর পানি ফেলে দিতে হবে। কারন আমরা জানি মশার ডিম প্রতিকূল পরিবেশে বছরকালও জীবিত থাকতে পারে এবং অনুকূল পরিবেশে তার বংশ বৃদ্ধি ঘটে। মশা মারার কার্যকরী ব্যাবস্থা গ্রহণ করতে হবে। এক্ষেত্রে পৌরসভা বা সিটি কর্পোরেশন দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে।
কোন ভাবেই যেন মশা কামড়াতে না পারে সেজন্য মশারী ব্যাবহার করতে হবে। মনে রাখা দরকার ডেঙ্গু রোগীর শরীর থেকে মশার মাধ্যমে ডেঙ্গু ভাইরাস ছড়ায়। জ্বর শুরুর আগের দিন থেকে জ্বরের সপ্তম দিন পর্যন্ত ডেঙ্গু রোগীর শরীর থেকে ডেঙ্গু ভাইরাস ছড়াতে পারে। কাজেই এই সময়ে ডেঙ্গু রোগীর সার্বক্ষণিকভাবে মশারির মধ্যে থাকা উচিত।
পরিশেষে বলব ডেঙ্গু নিয়ে আতঙ্কিত হবেননা। সতর্ক থাকলে খুব অল্প সংখ্যক ডেঙ্গু রোগীই জটিলতার মুখোমুখি হয়। তবে অসতর্কতা বা অবহেলা মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকির কারণ হতে পারে এমনকি মৃত্যু ও হতে পারে। এবারের ডেঙ্গু বিস্তৃতি বাংলাদেশে অন্যান্য বারের চেয়ে ব্যাপক। ইতিমধ্যে দেশের প্রায় সব জেলায় এ রোগের বিস্তার ঘটেছে। প্রথম দিকে কেবল ঢাকা কেন্দ্রিক হলেও এখন স্থানীয় পর্যায়ে সংক্রমণের ঘটনাও উল্লেখযোগ্য। এখনও পর্যন্ত বেশির ভাগ রোগীই ঢাকা ফেরত। তবে সামনে ঈদ বিপুল সংখ্যক মানুষ ঢাকা থেকে বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে যাবে। এবার তাদের অনেকেই যেমন আনন্দের উপলক্ষ্য হয়ে যাবে তেমনি দেশের আনাচে কানাচে ডেঙ্গু ভাইরাস বহন করে নিয়ে যাবে। একটি কথা মনে রাখা দরকার কেবল জ্বরের রোগীই ডেঙ্গু বহন করেনা। জ্বর এখনও হয়নি এমন মানুষের রক্তেও ডেঙ্গু ভাইরাস থাকতে পারে।
প্রশ্ন হচ্ছে ঢাকার মত সুবিধার শহর যখন হিমসিম খাচ্ছে সমস্যা সামাল দিতে তখন কতটা প্রস্তুত প্রান্তিক জনপদ। বড় শহরে জরুরী সেবার কিছুটা সুবিধা থাকলেও উপজেলাগুলোতে বলতে গেলে কিছুই নাই। যদিও খুব নগন্য সংখ্যক রোগীরই এমন সুবিধার প্রয়োজন হয়। তবে কার কখন জরুরী প্রয়োজন হবে সেটা আগে থাকে কে বলতে পারে? কাজেই প্রান্তিক রোগী শহরমুখী হবে সেটাই স্বাভাবিক। শহরে অন্তত সেই সুবিধা থাকা চাই। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে বেশিরভাগ গুরুত্বপূর্ণ শহরেও প্লেটিলেট দেওয়ার সুযোগ নেই। এখন বোধহয় সময় এসেছে এগুলো দ্রুত ব্যাবস্থা করার। আরও বিস্তার মারাত্নক জাতীয় সমস্যার কারণ হতে পারে। তাই আসুন সবাই মিলে এর প্রতিরোধ করি।
Last Updated on 05/04/2020 by Editorial Staff
Comments
ডেঙ্গু জ্বরে আতঙ্ক নয়, সতর্ক থাকুন — No Comments
HTML tags allowed in your comment: <a href="" title=""> <abbr title=""> <acronym title=""> <b> <blockquote cite=""> <cite> <code> <del datetime=""> <em> <i> <q cite=""> <s> <strike> <strong>