কোভিড-১৯ ভ্যাক্সিনেশন পরবর্তী রক্ত জমাট বাঁধার সমস্যা ও শঙ্কা
AstraZeneca এর কোভিড-১৯ ভ্যাক্সিন ChAdOx1নেবার পরে রক্ত নালীর ভীতরে রক্ত জমাট বেঁধে যাওয়ার (thrombosis) জটিলতা ও তার থেকে মৃত্যুর ঘটনা পর্যন্ত ঘটার কারনে এই ভ্যাক্সিনটি, যেটি আমাদের দেশেও ব্যবহার হচ্ছে, সেটি নিয়ে খানিকটা দ্বিধা ও শঙ্কা তৈরী হয়েছে। এধরনের ২টি রিপোর্ট প্রায় একই সময়ে আসে- প্রথমটি নরওয়ে থেকে এবং দ্বিতীয়টি জার্মানী ও অষ্ট্রিয়ার এক যৌথ গ্রুপ থেকে, যে রিপোর্ট দু’টি বৈজ্ঞানিক নিবন্ধ হিসেবে প্রকাশিত হয় New England Journal of Medicine এর একই সংখ্যায়, ৯ই এপ্রিল ২০২১-এ।
নরওয়েতে ৬৫ বছরের কম বয়সী স্বাস্থ্যকর্মী যারা সরাসরি কোভিড রোগীর সংস্পর্শে আসছিলেন না তাদের ১,৩২,৬৮৬ জনকে AstraZeneca –এর টীকার প্রথম ডোজ দেয়া হয়, ২০শে মার্চ ঐ টীকার প্রয়োগ স্থগিত করার আগে পর্যন্ত। এর মধ্যে ৫ জনের thrombosis জটিলতার প্রমান পাওয়া গিয়েছে যাদের মধ্যে ৩ জন মৃত্যু বরন করেন। প্রায় একই সময়ে জার্মানী ও অষ্ট্রিয়াতে এমন ঘটনার প্রমান পাওয়া যায় ১১ জনের যাদের মধ্যে ৬ জনই মৃত্যু বরন করেন। লক্ষনীয় যে এই ধরনের জটিলতায় আক্রান্তরা তুলনামূলক কম বয়সী, নরওয়ের ৫ জন ৩২ থেকে ৫৪ বছর বয়সী এবং জার্মান-অষ্ট্রিয়া গ্রুপের ১১ জনের বয়স ২২ থেকে ৪৯ বছরের মধ্যে। AstraZeneca –এর টীকা তুলনামূলক কম বয়সীদেরকে দেয়া হয়েছে, এটি বিবেচনায় রাখলেও বলা যায় যে সাধারণ মানুষের মধ্যে বয়স বাড়ার সাথে সাথে thrombosis এর সম্ভাবনা বাড়ার যে স্বাভাবিক প্রবনতা সেটি এক্ষেত্রে অনুপস্থিত। আরও লক্ষ্যনীয় যে এই সংখ্যার স্পষ্টতঃই বৃহৎ অংশ নারী, যেটি নরওয়ের ৫ জনের ৪ জন এবং জার্মানী-অষ্ট্রিয়ার ১১ জনের মধ্যে ৯ জন। এর খুব কাছাকাছি সময়ে যুক্তরাজ্যেও এই ধরনের সমস্যাপীড়িত ২৩ জনের বিষয়ে বিস্তারিত পরীক্ষা নিরীক্ষা করা হয়েছে এই অভিনব জটিলতার কার্যকারন অনুসন্ধানের জন্য, যার ফলাফল একই journal -এ প্রকাশিত হয়েছে পরের সপ্তাহেই।
ইউরোপ ও উত্তর আমেরিকাসহ বিশ্বের অধিকাংশ দেশে এই বছরের শুরুর দিকে, একেবারে কাছাকাছি সময়ের মধ্যে কোভিড-১৯ এর বিরুদ্ধে চারটি টীকা ব্যবহারের অনুমোদন দেয়া হয় জরুরী প্রয়োজনে। এর মধ্যে Moderna ও Pfizer এর টীকা RNA ভিত্তিক এবং AstraZeneca ও Johnson & Johnson এর টীকা Adenovirus vector ভিত্তিক। জরুরী ব্যবহারের জন্য অনূমোদিত যে কোন ওষুধের ক্ষেত্রে post marketing surveillance অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ন, যার ফলাফলের উপর ভিত্তি করে সংশ্লিষ্ট ওষুধের চুড়ান্ত অনুমোদন দেয়া হয়। সেই surveillance পর্যায়েই এই জটিলতা চিকিৎসা বিজ্ঞানীদের নজরে আসে।
ভ্যাক্সিন পরবর্তী এই thrombosis (১) তুলনামূলকভাবে কম বয়সীদের এবং (২) প্রধানতঃ নারীদের মধ্যে দেখা দেয়ার প্রবনতা ছাড়াও আরো কিছু বৈশিষ্ট লক্ষনীয়। যেমন,
(৩) সচরাচর রক্তের জমাট বাঁধার প্রবনতা দেখা যায় যেখানে শরীরের নিম্নাঙ্গে ও ফুসফুসে, সেখানে vaccine পরবর্তী এই জটিলতা সবচেয়ে বেশী দেখা গিয়েছে মস্তিষ্ক অভ্যন্তরস্থ বৃহৎ শিরা, পেটের ভিতরের রক্তনালী ও কিছু ক্ষেত্রে ফুসফুসের রক্তনালীসহ অন্যান্য জায়গায় অথবা একাধিক জায়গায় একসাথে। ফলে এদের অধিকাংশেরই এই জটিলতার প্রাথমিক লক্ষন হয় মাথা ব্যাথা, পেট ব্যাথা, পিঠ ব্যাথা, রক্ত ক্ষরণ ইত্যাদি। রক্ত ক্ষরণ কেন হয় সে ব্যাখ্যা একটু পরে আসছে।
(৪) এ পর্যন্ত যাদের এই জটিলতা হয়েছে তাদের প্রথম ডোজের পরেই হয়েছে। তবে প্রথম ডোজের পরে না হলে ২য় ডোজের পরে হবার সম্ভাবনা নেই, এমন উপসংহার টানার মত সময় এখনি আসেনি।
(৫) এটি দেখা দিয়েছে ভ্যাক্সিন নেয়ার পরবর্তী ৫ থেকে ২৪ দিনের মধ্যে এবং অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ২য় সপ্তাহে।
(৬) সবচেয়ে লক্ষনীয় যে, এদের সবার ক্ষেত্রে ইমেজিং-এর মাধ্যমে রক্ত নালীর মধ্যে রক্ত জমাট বাঁধা বা thrombus পাওয়ার সাথে রক্তে অনুচক্রিকা বা platelet বা thrombocyte এর সংখ্যা কম পাওয়া গিয়েছে এবং সেই সংখ্যা অনেক সময় এত কম যে তা মারাত্বক রক্তক্ষরণের কারন হয়েছে। যার জন্য বিজ্ঞানীরা এই জটিলতার নাম দিয়েছেন vaccine induced thrombotic thrombocytopenia (VITT) বা ভাক্সিনঘটিত রক্তজমাট বাঁধার সমস্যাজনিত অনুচক্রিকার ঘাটতি।
Thrombosis এর সাথে platelet কমে যাওয়া বা thrombocytopenia, এমনটি খুব বেশী ক্ষেত্রে দেখা যায় না। এর আগে চিকিৎসাবিজ্ঞানে জ্ঞাত যেসব ক্ষেত্রে এমনটি দেখা যায় তাঁর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে heparin induced thrombocytopenia (HIT) অথবা Heparin induced thrombocytopenia and thrombosis (HITT); রক্ত জমাট বাঁধা ঠেকানোর সবচেয়ে বেশী প্রচলিত heparin জাতীয় ওষুধ দেয়ার ফলে কারো কারো ক্ষেত্রে এই জটিলতা হতে পারে। Heparin ইঞ্জেকশন দেওয়ার পরে শুধু platelet কমে গেলে বলা হয় HIT আর HITT বলা হয় যদি একই সাথে রক্তনালীর মধ্যে thrombosisও পাওয়া যায়। Heparin ইঞ্জেকশান শরীরে ঢুকানোর পরে সেটি অনুচক্রিকার গায়ে থাকা platelet factor-4 (PF-4) নামে একটি protein এর সাথে যৌগ (complex) তৈরী করে। কারো কারো শরীরে এই যৌগের বিরুদ্ধে এক ধরনের antibody তৈরী হয়, যা heparin এর অনুপস্থিতিতেও শুধুমাত্র PF-4 এর বিরুদ্ধেও সমান সক্রিয়। এই antibody এর উপস্থিতির কারনে অনুচক্রিকাগুলো দলা পাকিয়ে নষ্ট হয়ে যায়, ফলশ্রুতিতে রক্তে অনুচক্রিকার সংখ্যা কমে যায় (thrombocytopenia); শুধু অনুচক্রিকা কমে গেলে বলে HIT আর অনুচক্রিকার দলাগুলো রক্তনালীর মধ্যে আটকে থেকে thrombosis ঘটালে সেটাকে HITT বলে। অত্যন্ত কৌতুহলোদ্দীপক বিষয় হল এই যে, VITT দেখা দেয়া সমস্ত ব্যক্তির রক্তেই এই PF4 এর বিরুদ্ধে antibody পাওয়া গিয়েছে, যেটি প্রথম জানা যায় মার্চের ২য় সপ্তাহে। বলে রাখা দরকার যে, antibody উৎপাদনসহ যে কোন immunological reation বৃদ্ধদের শরীরের তুলনায় অল্পবয়সীদের শরীরে বেশী শক্তিশালী, যেটি VITT এর প্রকোপ তুলনামূলক কম বয়সীদের ক্ষেত্রে বেশী হওয়ার ব্যাখ্যা হতে পারে। এসব থেকে বিজ্ঞানীরা মোটামুটি নিশ্চিত যে HIT বা HITT এবং VITT এর পিছনে রয়েছে মোটামুটি হুবহু একই ধরণের শরীরবৃত্তীয় প্রতিক্রিয়া। এই শরীরবৃত্তীয় কারন না জানা থাকাই প্রথম দিকে এই জটিলতায় উচ্চ মৃত্যুহারের কারন বলে ধরে নেয়া হচ্ছে। কারন আর দশটা রক্তজমাট বাঁধার সমস্যার মত এদের ক্ষেত্রেও heparin জাতীয় ওষুধ দিয়ে চিকিৎসা দেয়া হয়েছিল যাতে হীতে বিপরীত হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। Heparin দেবার ফলে এদের শরীরে PF-4 এর বিরুদ্ধে antibody এর মাত্রা আরো বেড়ে যাওয়া খুবই সম্ভব যা পরিস্থিতির উন্নতি না করে আরো অবনতি ঘটিয়ে থাকবে। এছাড়াও এদের অনেকের রক্তে platelet অত্যন্ত কম থাকার কারনে অথবা heparin ইঞ্জেকশান দেবার জন্য রক্তে platelet এর সংখ্যা প্রতি ঘন মিলিমিটারে ২৫,০০০ এর উপরে রাখার উদ্দেশ্যে platelet transfusion দেয়া হয়েছে। HIT বা HITT এর ক্ষেত্রে যেমন PF4 এর উপস্থিতির কারনে রোগীর শরীরে platelet ঢুকালে তা ‘অগ্নিতে ঘৃতাহুতি’র মত কাজ করে, VITT এর ক্ষেত্রেও তেমনটি হবার সম্ভাবনা প্রবল। HIT ও HITT এর সাথে VITT এর এত মিলের পাশাপাশি একটি পার্থক্যও লক্ষনীয়; সেটি হচ্ছে HIT অধিকাংশ ক্ষেত্রে কোনরকম লক্ষনীয় thrombosis ছাড়াই হয়, কখনও কখনও thrombosis সহ হলেই HITT বলা হয়। অন্যদিকে VITT তে এ পর্যন্ত প্রায় সবার ক্ষেত্রে thrombosis আর thrombocytopenia যুগপৎ দেখা যাচ্ছে।
যেহেতু Moderna এবং Pfizer এর RNA ভিত্তিক ভ্যাক্সিন বিপুল সংখ্যক ব্যবহারেও VITT –এর কোন ঘটনা পাওয়া যায় নি, সেহেতু প্রশ্ন চলে আসে যে, adenovirus vector ভিত্তিক ভ্যাক্সিন যথেষ্ট নিরাপদ কি না। আবার যুক্তরাষ্ট্রে অনুমোদিত আরেক adenovirus vector ভিত্তিক টীকার ক্ষেত্রে এই জটিলতা প্রথমে না দেখা যাওয়ার কারনে মনে হওয়া স্বাভাবিক যে এটি শুধুমাত্র প্রাকৃতিক adenovirus ভ্যাক্সিনেরই সমস্যা; কারন AstraZeneca এর ভ্যাক্সিন ChAdOx1-এর জন্য ব্যবহৃত adenovirus শিম্পাঞ্জীর শরীর থেকে নেয়া; অন্যদিকে Johnnson & Johnson এর টীকার জন্য adenovirus কৃত্রিমভাবে তৈরী করা হয়েছে recombinant DNA technology ব্যবহার করে। তবে শেষ পর্যন্ত Johnson & Johnson এর টীকা গ্রহীতাদের মধ্যেও অনুরূপ জটিলতার দেখা পাওয়ার কথা জানা যায় যুক্তরাষ্ট্রে CDC ও FDA এর ১৩ই এপ্রিলে দেয়া এক যৌথ বিবৃতিতে। সেখানে ৬৮ লাখেরও বেশী এই ভ্যাক্সিন গ্রহীতাদের মধ্যে ৬ জনের এই VITT দেখা গিয়েছে যা দৃশ্যতঃ AstraZeneca ভ্যাক্সিন গ্রহীতাদের মধ্যে আক্রান্তের হারের তুলনায় অনেক কম। তবে সেখানেও লিঙ্গের বিচারে নারী আধিক্য; আক্রান্তের সকলেই ছিলেন নারী। ইতোমধ্যে PF-4 antibody এর ব্যাপারে জানা হয়ে যাওয়ায় heparin দিয়ে চিকিৎসা না করার ব্যাপারে সতর্কতার কারনেই হয় তো সেখানে VITT থেকে কোন মৃত্যুর খবর তখন পর্যন্ত পাওয়া যায় নি।
এই পরিস্থিতিতে adenovirus vector ভিত্তিক ভ্যাক্সিন, বিশেষতঃ AstraZeneca এর ChAdOx1 ভ্যাক্সিন এর ব্যবহারের বিষয়ে কি করা উচিৎ?
এই প্রশ্নের উত্তর বুঝতে হলে risk benefit ratio বুঝা দরকার। যে কোন ওষুধ বা চিকিৎসা পদ্ধতি প্রয়োগ যুক্তিযুক্ত কি না তা নির্ভর করে এই risk benefit ratio বা ঝুঁকির তুলনায় উপকারের অনুপাতের উপরে। একটি উদাহরন দেয়া যাক। ধরুন আপনি কোন ভবনের ৫ তলার উপরে আছেন, সেখানে এক আততায়ী আপনাকে ছুরি নিয়ে তাড়া করেছে আরেকজন সিঁড়ি আগলে আছে। আপনি বাচার জন্য ব্যালকনি থেকে লাফ দিবেন না, কারন সেটার চেয়ে আপনার পক্ষে সিঁড়ি আগলে রাখা লোকটিকে মোকাবিলা করে নেমে বাচার সম্ভাবনা বেশী। ঐ একই ভবনের ৪ তলার সবখানে যদি আগুন ছড়িয়ে পড়ে আর আপনি তখন যদি ৫ তলায় থাকেন, উদ্ধারকারী না পৌছলে আপনাকে তখন ঠিকই ৫ তলার ব্যালকনি থেকে লাফ দিতে হবে। অর্থাৎ, একই কাজের ব্যাপারে ভিন্ন ভিন্ন পরিস্থিতিতে ভিন্ন ভিন্ন সিদ্ধান্ত পৌছানোর নিয়ামক হচ্ছে risk benefit ratio । কেম্ব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের Winton Center for Risk and Evidence Commmunication যুক্তরাজ্যের প্রেক্ষিতে এই risk benefit ratio-এর গানিতিক হিসেব দিয়েছেন। তাঁরা দেখেছেন corona virus এর সংস্পর্শে আসার ঝুঁকি কম এমন মানুষদেরকে ChAdOx1 টীকা দেয়ার মাধ্যমে ICU তে যাবার হার কমানো গিয়েছে ২০–২৯ বছর বয়সীদের ক্ষেত্রে প্রতি ১ লাখ জনে ০.৮ জন; যে হার ৩০-৩৯ বয়সীদের ২.৭, ৪০-৫৯ বয়সীদের ৫.৭, ৫০-৫৯ বয়সীদের ১০.৫ এবং ৬০-৬৯ বয়সীদের ক্ষেত্রে ১৪.১ জন। বিপরীতে একই প্রেক্ষাপটে VITT এর হার প্রতি লাখে যথাক্রমে ১.১, ০.৮, ০.৫, ০.৪ ও ০.২ জন। অর্থাৎ, ৩০ বছরের উপরের সবার মধ্যে টীকা দিয়ে ICU ভর্তি ঠেকানোর হার VITT এর হারের তুলনায় বেশী এবং পার্থক্যটি বয়স বাড়ার সাথে ক্রমবর্ধমান। উপরন্তু আমরা জানি ICU তে যেতে হয় এমন কোভিড-১৯ রোগীদের মৃত্যুহার এখনও অতি উচ্চ, তুলনায় VITT আক্রান্ত রোগীদের মৃত্যুহার প্রথম দিকে খুব বেশী হলেও এর সাথে PF-4 antibody এর কার্যকারনগত সম্পর্কের উদ্ঘাটন ও সেই অনুযায়ী চিকিৎসায় মৃত্যু সম্ভাবনা একেবারেই কমে এসেছে। অতএব, অন্তত ত্রিশোর্ধ্বদের ক্ষেত্রে, অধিকতর নিরাপদ ভ্যাক্সিনের অনুপস্থিতিতে ChAdOx1 ব্যাবহারে দ্বিধা করার অবকাশ নেই।
VITT এর কোন রিপোর্ট না পাওয়ার কারনে আপাততঃ অধিকতর নিরাপদ বলে প্রতীয়মান হওয়া Moderna ও Pfizer এর RNA ভ্যাক্সিন দুটি সংরক্ষণের জন্য প্রয়োজনীয় তাপমাত্রা সেলসিয়াস স্কেলে ০ ডিগ্রীরও ১৫ থেকে ৫০ ডিগ্রী নীচে হওয়ার কারনে বাংলাদেশের মত স্বল্পোন্নত কোন দেশে ব্যাপক টীকাকরণ কার্যক্রমে এটির ব্যবহার এখন পর্যন্ত বাস্তবসম্মত নয়। এই ভ্যাক্সিনগুলি অধিকতর মূল্যবানও বটে, যেখানে risk benefit ratio এর পরে cost benefit ratio একটি গুরুত্বপূর্ণ বিবেচ্য।
আরো একটি বিষয় লক্ষনীয় যে, জন্মগতভাবেই রক্ত জমাট বেঁধে যাওয়ার প্রবনতার (inherited thrombophilia) হার আমাদের দেশে কত সে সম্পর্কে কোন তথ্য জানা না থাকলেও উত্তর ইউরোপীয় জনগোষ্ঠীর মধ্যে অন্যান্য উন্নত দেশের তুলনায় এর হার অনেক বেশী; এবং VITT এর ঘটনাগুলোও তুলনামূলক বেশী হারে ঘটেছে এই উত্তর ইউরোপীয় জনগোষ্ঠীর মধ্যে। অতএব, (১) কোভিড থেকে উচ্চ মৃত্যু ঝুঁকি, (২) VITT এর বিরল সম্ভাবনা এবং (৩) দ্রুতই VITT এর কার্যকারন উদ্ঘাটিত হওয়ার কারনে তার কার্যকর চিকিৎসার সম্ভাব্যতা- এই তিনটি বিষয় একসাথে বিবেচনায় নিলে কোভিড ভ্যাক্সিন নেয়ার ব্যাপারে কোন দ্বিধা করার সুযোগ নেই।
সতর্কতা হিসেবে জানা থাকা দরকার যে কখন VITT হতে পারে বলে সন্দেহ করা উচিৎ। এ বিষয়ে বিজ্ঞানীদের থেকে সার্বজনীন কোন দিকনির্দেশনা না এলেও সবার মতামতের ভিত্তিতে বলা যায় যে, ভ্যাক্সিন নেবার পরে ৫ম থেকে ২৪ তম দিনের মধ্যে কারো যদি হঠাৎ নতুন ধরণের মাথাব্যাথা, পেটে ব্যাথা, পিঠে ব্যাথা বা হঠাৎ শ্বাসকষ্ট দেখা দেয় অথবা কোথাও রক্তক্ষরণের লক্ষন দেখা দেয়, তবে VITT সন্দেহ করে complete blood count পরীক্ষা করতে হবে। তাতে platelet কম পাওয়া গেলে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক তাঁর thrombosis আছে কিনা দেখার জন্য তথা VITT নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষার ব্যবস্থা করবেন। VITT এর চিকিৎসা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা এখানে সঙ্গত নয়। তবে দু’টি সতর্কতা বলে রাখা উচিৎ মনে করি- ১) সকল ধরনের thrombosis এর ক্ষেত্রে যে heparin জাতীয় ওষুধ সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য, VITT এর ক্ষেত্রে সেই heparin দেয়া চলবে না। ২) platelet এর সংখ্যা বাড়ানোর জন্য platelet transfusion দেয়া এখানে শুধু অকার্যকর ও অপ্রয়োজনীয়ই নয়, বিপজ্জনকও বটে।
Last Updated on 05/08/2021 by Editorial Staff
Comments
কোভিড-১৯ ভ্যাক্সিনেশন পরবর্তী রক্ত জমাট বাঁধার সমস্যা ও শঙ্কা — No Comments
HTML tags allowed in your comment: <a href="" title=""> <abbr title=""> <acronym title=""> <b> <blockquote cite=""> <cite> <code> <del datetime=""> <em> <i> <q cite=""> <s> <strike> <strong>