আইটিপি সচেতনতা সপ্তাহ
সেপ্টেম্বর মাসের ২০ তারিখ থেকে ২৪ তারিখ পর্যন্ত বিশ্ব আইটিপি (ITP) সচেতনতা সপ্তাহ পালন করা হচ্ছে। কিন্তু ITP কি?
এটা ইংরেজি ভাষায় একটি রোগের সংক্ষিপ্ত রূপ। পুরো নামটা বড় হওয়ায় ও বাংলায় ভাষান্তর জটিল হওয়ায় আমরা ITP নামটিই গ্রহণ করেছি। এটি এমন একটি রোগ যে অবস্থায় রোগীর অস্বাভাবিক রক্তপাত হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দেয়। ITP-তে রক্তের প্লেটলেট (Platelet বা অনুচক্রিকা) কমে যায়। প্লেটলেট কমে যাওয়ার অনেক কারণ থাকে, তার মধ্যে ITP একটি এবং তা হরহামেশাই দেখা যায়।
আইটিপির কারণ কি?
আমাদের দেহে রক্তকোষগুলো, যাদের অনুবীক্ষণ যন্ত্র বা মাইক্রোস্কোপ (Microscope) ছাড়া দেখা যায় না, তারা বিভিন্ন ধরণের কাজ করে। এর মধ্যে একটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ ও জটিল কাজ হচ্ছে রোগ-জীবাণু বা নিজ দেহের বাইরের অন্য কোনো কোষ-এর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলা। এই কাজকে বলা হয় ইমিউনিটি (Immunity)। ইমিউনিটির কাজ হচ্ছে মূলত রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা জোরদার করা। কিন্তু বিপদের ব্যাপার হচ্ছে, কোনো কোনো রোগের কারণই হচ্ছে এই ইমিউনিটি বিগড়ে যাওয়া বা অস্বাভাবিক আচরণ করা। সুস্থ অবস্থায় ইমিউনিটি নিজ দেহকোষ থেকে ভিন্ন কোষ বা জীবাণু পৃথক করতে পারে, তাই নিজ দেহের বিরুদ্ধে কোনো প্রতিক্রিয়া দেখায় না। কিন্তু ইমিউন রোগে (Immune disease) ইমিউনিটির সাথে জড়িত রক্তকোষ ও অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগুলো, যাদেরকে একসাথে ইমিউন সিস্টেম (Immune system) বলা হয়, তারা নিজ দেহকোষের বিরুদ্ধে আক্রমণাত্মক আচরণ করে থাকে ও নিজ দেহকোষ ধ্বংস করতে থাকে। মানে শত্রু মিত্র চিনতে অক্ষম হয়ে থাকে। ITP হচ্ছে এমন একটি রোগ যেখানে ইমিউন সিস্টেম নিজের শরীরের রক্তের প্লেটিলেট ধ্বংস করতে থাকে।
তাহলে প্লেটিলেট কি?
প্লেটিলেট হচ্ছে এক ধরণের রক্ত কণিকা যা কোনো আঘাতে রক্তপাত সীমিত করে। স্বাভাবিক অবস্থায় রক্তের প্লেটলেট শরীরের যেকোন স্থানে ক্ষত হলে রক্তক্ষরণ বন্ধ করার ক্ষেত্রে প্রধান ভূমিকা পালন করে থাকে। প্লেটিলেটের সংখ্যা কমে গেলে বা প্লেটিলেট ঠিক মত কাজ না করলে রক্তপাত হওয়ার প্রবণতা বেড়ে যায়; অল্প আঘাতেই রক্তপাত হয় বা রক্তপাতের পরিমাণ এবং রক্তপাতের সময় বেশী থাকে। ফলে ইমিউন সিস্টেম রক্তের প্লেটিলেট ধ্বংস করতে থাকলে রক্তে প্লেটিলেটের সংখ্যা কমে যাবে ও অস্বাভাবিক রক্তপাত হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দেবে। এই অবস্থায় অনেক ক্ষেত্রেই চামড়ায় ফোটা ফোটা লাল দাগ দেখায় যায়, যাকে ইংরেজিতে পারপুরা (Purpura) বলে। এই জন্য পুরো রোগটার নাম হচ্ছে Immune Thrombocytopenic Purpura (ITP), অর্থাৎ, ইমিউনিটির কারণে প্লেটিলেট কমে গিয়ে (thrombocytopenia) পারপুরা।
আইটিপির লক্ষণ কি?
একটি লক্ষণ ইতোমধ্যে বলা হয়েছে, চামড়ায় ফোটা ফোটা লাল দাগ দেখা দেয়া, যা কয়েক দিনের মধ্যে মিলিয়ে যেতে থাকে আর নতুন নতুন দাগ পড়তে থাকে। এছাড়া অল্প আঘাতে কালশিটে (Bruise) দাগ পড়ে। অনেক সময় আঘাতের কথা মনেও থাকে না। চামড়ার বড় দাগগুলো লাল থেকে কালচে নীল হয়ে ২-১ সপ্তাহের মধ্যে মিলিয়ে যায়। নাক বা দাঁতের গোড়া দিয়ে রক্ত আসতে পারে, মাসিকের সময় বেশী রক্ত যেতে পারে। কোথাও কেটে গেলে অস্বাভাবিক বেশী রক্তপাত হতে পারে। অন্য যে কোনো রকমের মামুলি রক্তপাত থেকে শুরু করে জীবননাশকারী রক্তপাত, যেমন পেটের ভেতর অথবা মাথার ভেতর মস্তিষ্কে রক্তপাত হতে পারে।
এই রোগ কাদের হয়?
সব বয়সের মানুষদেরই হতে পারে। সাধারণত শিশুদের ক্ষেত্রে সর্দি-কাশি বা শ্বাসনালী জীবাণু দ্বারা আক্রান্ত হওয়ার কয়েক সপ্তাহ পর ITP হতে পারে, এবং একবার হয়ে কয়েক সপ্তাহ বা কয়েক মাস পর চিরতরে ভালো হয়ে যায়। অন্যদিকে, প্রাপ্ত বয়স্কদের ITP অনেক সময় অন্য রোগের সাথে থাকে, এবং সাধারণত নিয়ন্ত্রণ করা গেলেও নির্মূল করা কঠিন হয়ে পড়ে।
করণীয় কি?
যদি ওপরের লক্ষণগুলোর কোনোটি দেখা দেয়, অতি সত্বর রক্তরোগ বিশেষজ্ঞ (হেমাটোলজিস্ট, Hematologist)-র শরণাপন্ন হউন। তিনি কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে সিদ্ধান্ত জানাবেন। অন্যদিকে, কোনো লক্ষণ না থাকলেও কখনও কোনো কারণে রক্ত পরীক্ষা করে যদি প্লেটিলেট কম পাওয়া যায় তাহলেও নিকটস্থ রক্তরোগ বিশেষজ্ঞের সাথে যোগাযোগ করুন। অস্বাভাবিক রক্তপাত হওয়া বা প্লেটিলেট কম থাকা মানেই ITP না, কিন্তু অস্বাভাবিক রক্তপাতের চিকিৎসা হেমাটোলজিস্ট বা রক্তরোগ বিশেষজ্ঞই ভালো করতে পারবেন।
Last Updated on 21/09/2021 by Editorial Staff
Comments
আইটিপি সচেতনতা সপ্তাহ — No Comments
HTML tags allowed in your comment: <a href="" title=""> <abbr title=""> <acronym title=""> <b> <blockquote cite=""> <cite> <code> <del datetime=""> <em> <i> <q cite=""> <s> <strike> <strong>