রক্তের বিকল্প ও রক্তস্বল্পতায় করনীয়
লিখেছেন ডাঃ মোহাম্মদ কামরুজ্জামান
রক্তস্বল্পতা হলেই রক্ত দেওয়া উচিত নয়।
একটা ছিদ্র কলসীতে যতই পানি ঢালা হোক না কেন এক সময় কলসী খালি হয়ে যাবেই যদি ছিদ্র বন্ধ না করা হয়। তাই পরীক্ষা নিরীক্ষার মাধ্যমে রক্তস্বল্পতার কারণ বের করে সেই কারণ অনুযায়ী চিকিৎসা দেওয়া উচিত।
অস্থিমজ্জা থেকে রক্ত তৈরি হয়ে রক্তনালির মাধ্যমে সারা শরীরের অংগসমূহে সরবরাহ হয়। তাহলে দেখা যাক কি কি কারণে রক্তস্বল্পতা হতে পারেঃ-
১). অস্থিমজ্জা হতে কম রক্ত উৎপাদন হওয়ার কারণে রক্তস্বল্পতা। যেমনঃ রক্ত তৈরির উপাদান কম খাওয়ার কারণে অথবা খাদ্যনালী থেকে পুষ্টির (আয়রন, বি১২, ফলিক এসিডের) শোষণ ব্যাঘাত ঘটলে (আলসার, দীর্ঘদিন গ্যাস্ট্রিকের ঔষধ, এন্টিবডি) অথবা দীর্ঘ মেয়াদি অসুখ থাকলে, ম্যারো ফেইলর হলে ইত্যাদি।
২). রক্ত কনিকা স্বাভাবিকের চেয়ে অধিক হারে ভেংগে যাওয়ার কারণে রক্তস্বল্পতা। যেমন বংশগত রোগ থ্যালাসেমিয়া, ইমিউন হিমোলাইটিক এনিমিয়া ইত্যাদি।
৩). অনেক দিন ধরে অল্প অল্প অথবা স্বল্প সময়ে অনেক রক্তক্ষরণ হয়ে রক্তস্বল্পতা। যেমন পাইলস বা অশ্ব রোগ, কোষ্ঠকাঠিন্য, পেপটিক আলসার সহ খাদ্যনালীর যে কোন জায়গায় যেকোনো কারণে রক্তক্ষরণ (কৃমি, ব্যাথা নাশক ঔষধ, পলিপ, টিউমার বা ক্যান্সার), অধিক ঋতু স্রাব বা মাসিক, ঘন ঘন গর্ভপাত বা সন্তান জন্মদান, ঘন ঘন রক্তদান, রক্ত বমি, কাশির সাথে রক্ত ইত্যাদি।
রক্তের বিকল্প কি কি ?
রক্তক্ষরণ বা আয়রনের ঘাটতির কারণে রক্তস্বল্পতা হলে কোথা থেকে (দৃশ্য বা অদৃশ্য) রক্তক্ষরণ হচ্ছে বা কেন আয়রনের ঘাটতি হচ্ছে তা রোগীর ইতিহাস নিয়ে ও পরীক্ষা নিরীক্ষার মাধ্যমে খুঁজে বের করে সেই কারণের চিকিৎসা করতে হয় এবং মুখে বা ইঞ্জেকশনের মাধ্যমে শরীরে আয়রন দিয়ে বেশির ভাগ আয়রনের ঘাটতি জনিত রক্তস্বল্পতার চিকিৎসা করা সম্ভব। জীবনের ঝুঁকি না থাকলে (যেমন- হার্ট ফেইলর, ফুসফুসের সমস্যা, একদম ছোট বাচ্চা, বেশি বয়স্ক, এডভান্স প্রেগন্যান্সি, মেজর অপারেশন, কোন কারণে অনবরত অধিক রক্তক্ষরণ) হিমোগ্লোবিন ৬ গ্রাম/ডেসিলিটার এর নিচে না নামলে এক্ষেত্রে রক্ত না দিয়ে বিকল্প চিকিৎসা নেওয়া উচিত।
ভিটামিন বি১২ বা ফলিক এসিড ঘাটতিজনিত রক্তস্বল্পতা হলে ঘাটতির কারণ বের করে চিকিৎসা এবং মুখে বা ইঞ্জেকশনের মাধ্যমে বি১২ বা ফলিক এসিড দিয়ে ঘাটতি পুরণ করতে হয়।
ম্যারো ফেইলর যেমন এপ্লাস্টিক এনিমিয়া, পিউর রেড সেল এপ্লাসিয়া, লিউকেমিয়া বা ব্লাড ক্যান্সার হলে সঠিক চিকিৎসা নিতে হয়।
হিমোলাইটিক এনিমিয়া যেখানে অস্থিমজ্জা থেকে রক্ত উৎপাদনে কোন সমস্যা না থাকলেও উৎপাদিত রক্ত অধিক হারে ভেংগে গিয়ে রক্তস্বল্পতা হয় সাথে জন্ডিস থাকে, লিভার ও প্লীহা বড় থাকতে পারে। কি কারণে রক্ত ভেংগে যায় তা নিশ্চিত হয়ে সেটার চিকিৎসা করতে হয়। বংশগত থ্যালাসেমিয়া রুগীদের হিমোগ্লোবিন ৭ গ্রাম/ডেসিলিটার এর নিচে না হলে রক্ত দেওয়া লাগে না। তবে রক্ত যাতে বেশি কমে না যায় সেজন্য ইদানিং কিছু মুখে খাওয়ার ঔষধ দেওয়া হয়। থ্যালাসেমিয়া যেহেতু বংশগত রোগ তাই সারাজীবন চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে চিকিৎসা নিতে হয়। থ্যালাসেমিয়া বাহক কোন রোগী না। তাই জীবন যাপনে তেমন সমস্যা হয় না বলে চিকিৎসাও লাগে না। তবে জীবন সংগী নির্বাচন ও বাচ্চা নেওয়ার আগে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
আর ইমিউন হিমোলাইটিক এনিমিয়ার রোগীকে রক্ত দেওয়া নিষেধ। এখানে রোগীর দেহে অটো এন্টিবডি তৈরি হয়ে নিজের রক্তকণিকা ভেংগে ফেলে সুতরাং রক্ত নেওয়ার পরে রোগীর শরীরে ডোনারের রক্ত কণিকাও ভেংগে ফেলবে ফলে রক্ত নিলেও রক্ত বাড়বে না। এক্ষেত্রে ঔষধের মাধ্যমে চিকিৎসা করলে বেশিরভাগ রোগী ভাল হয়ে যায়।
গ্রোথ ফ্যাক্টর ইঞ্জেকশন দিয়ে অনেক ক্ষেত্রে (এনিমিয়া অফ ক্রনিক ডিজিজ- সিকেডি, সিএলডি, ম্যালিগনেন্সি, ক্রনিক ইনফেকশনে) রক্ত বাড়ানো যায়।ক্যান্সার চিকিৎসারত রোগীসহ অনেক সময় রক্তের ডব্লিউবিসি, নিউট্রোফিল কমে যায় সেক্ষেত্রে কারণ বুঝে অনেক ক্ষেত্রে গ্রোথ ফ্যাক্টর ইঞ্জেকশন দিয়ে নিউট্রোফিল বাড়ানো যায়।
অনেক রোগে রক্তের প্লেটলেট কমে যায়। রোগ বুঝে মুখে খাওয়ার ঔষধ এবং কোন কোন ক্ষেত্রে প্লেটলেট ট্রান্সফিউশন না দিয়ে কিছু ট্যাবলেট ব্যবহার করে প্লেটলেট বাড়ানো সম্ভব।
$ সব রক্তস্বল্পতার জন্য রক্ত দেওয়া একমাত্র চিকিৎসা নয়। রক্তস্বল্পতার কারণ জানা অতপর সেই কারণের চিকিৎসা ও ঘাটতি পুরণ করা জরুরী। তবে মরণাপন্ন রোগীর ক্ষেত্রে রক্তের বিকল্প রক্ত এবং আগে জীবন বাচাতে হয় তারপর অন্যকিছু…..
$ রোগের কারণে রক্তের হিমোগ্লোবিন ও রক্ত কনিকা বেড়ে যেতে পারে সেক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ মোতাবেক কারণ জেনে চিকিৎসা নিতে হয়।
বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া অনুমান ভিত্তিক ঔষধ ব্যবহার ক্ষতির কারণ হতে পারে।
Last Updated on 21/07/2020 by Editorial Staff
Comments
রক্তের বিকল্প ও রক্তস্বল্পতায় করনীয় — No Comments
HTML tags allowed in your comment: <a href="" title=""> <abbr title=""> <acronym title=""> <b> <blockquote cite=""> <cite> <code> <del datetime=""> <em> <i> <q cite=""> <s> <strike> <strong>